বাংলা ইবই এলো কাদের হাত ধরে?
মাসতিনেক ধরে একটা খুব দারুণ ভালো ব্যাপার ঘটে চলছে বাংলা বইয়ের জগতে, সেটা হচ্ছে, হঠাৎ করে অনেকগুলো প্রকাশনী এবং অনেক পাঠক বাংলা ইবই প্রকাশে ও পাঠে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এতগুলো বছর আন্তর্জালে বাংলা ইবই ছিল খুবই স্বল্প-সংখ্যক, একেবারে হাতে গোণা যাকে বলে। তুলনায় এ বছরের প্রথমার্ধেই বিভিন্ন ইবুক স্টোরে বাংলা ইবইয়ের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এর চেয়ে খুশির খবর আমার জন্যে আসলেই আর কিছু নেই। লম্বা সময় ধরে বাংলা ইবইকে জনপ্রিয় করতে এর খুঁটিনাটি নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে আসছি।
গত কয়েকবছরে বেশ কয়েকটি বইয়ের ক্রমবর্ধমান বিক্রি এ ব্যাপারে আমাকে আরও বেশী আশাবাদী করে তুলেছে। যদিও বাংলাদেশে অনলাইন পেমেন্ট এবং ইবুকস্টোরের ব্যবহার সহজসাধ্য না হওয়ায় দেশের বাজারে ইবই প্রকাশের বাঁধা এখনও কাটেনি, তবে দেশের বাইরে বাংলা ইবইয়ের পাঠকসংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। কিন্তু গত কয়েকমাস ধরে, সম্ভবত, এই মহামারীর কারণেই, ঘরে বসে সহজলভ্য হবার সুবাদেই বাংলা ইবই প্রকাশের হার অনেক বেড়েছে।
এর মধ্যেই হঠাৎ খেয়াল করলাম, বাংলা ইবই কারা প্রথম প্রকাশ করা শুরু করেছেন বা কে কত আগে থেকে বাংলা ইবই প্রকাশ করে আসছেন- এ বিষয়ে কেউ কেউ নিজেই দাবী তুলছেন, আবার কেউ বা দুয়েকটি প্রকাশনীকে বাংলা ইবইয়ের পাইওনিয়ার বলে পিঠ চাপড়াচ্ছেন। এদিকে যাদেরকে বাহবা দেয়া হচ্ছে, তাঁরা সম্ভবত সঠিক তথ্যের অভাবেই সেই চাপড় পিঠ পেতে আরাম করে নিয়ে নিতে কোনও দ্বিধা করছেন না।
এসব দেখে শুনে এতদিন খুব একটা রা করিনি। প্রয়োজন মনে করিনি কারণ মনে হচ্ছিল এগুলো আসলে তেমন কোনও ব্যাপার নয়, বাংলা ইবই বাড়ছে এটাই আসল কথা।
কিন্তু ফেইসবুকে ইবই সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গ্রুপে আসা যাওয়ার সুবাদে এরকম তথ্যের উপস্থিতি ইদানীং অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় আমি ভাবলাম, অন্তত বইদ্বীপের টাইমলাইনটুকু কোথাও লিখে রাখি। কেউ না কেউ কোনও একদিন সত্যের খোঁজ করতে গিয়ে এই লেখাটি খুঁজে পেতেও পারে, হয়ত এটা তখন কাজেও লাগবে।
বাংলা ইবই নিয়ে বইদ্বীপের টাইমলাইন।
১/ ০৪ মে ২০১২-
- 'কাঠের সেনাপতি' বইটির ইবুক ভার্সন বের করি smashwords ডট কম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। প্রকাশক হিসেবে আমার নিজের নামই ছিল কারণ তখনও বইদ্বীপ প্রকাশনী প্রতিষ্ঠা করিনি। এ বইটিতে সে সময় প্রচুর কারিগরি ত্রুটি ছিল, ফন্ট ভাঙ্গা বা ভেতরের ফরম্যাটিং ঠিক-ঠাক ছিল না। পরবর্তীতে এটি ঠিকঠাক করে আরও দু'বার প্রকাশ করি ২২ অক্টোবর এবং ০৭ নভেম্বর ২০১২ সালে।
২/ ০৪ ডিসেম্বর ২০১২-
-বইদ্বীপ প্রকাশনীর ব্যানারে এবারে প্রথম ইবইটি প্রকাশ করি। এটির নাম 'ইলিয়াসের ঘোড়া'। সেই সময়ের অনুপাতে এর ভেতরে ভুল প্রায় ছিল না বললেই চলে। এটার আউটপুট নিয়ে বেশ খুশি ছিলাম আমি। ইপাব এবং মোবি দুই ভার্সনেই নির্ভুল আউটপুট এসেছিল এই বইটির।
৩/ ১৫ ডিসেম্বর ২০১২-
- বইদ্বীপ বিষয়ক প্রথম ঘোষণাটি আমার ব্লগ 'করি বাংলায় চিৎকার'- এ প্রকাশ করি।
৪/ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪-
- এর মাঝে আরও কয়েকটি বই পরীক্ষামূলকভাবে প্রকাশ করে যখন মোটামুটি একটা কার্যপ্রণালী দাঁড় করাতে পারলাম, তখন সেগুলি একসাথে করে প্রকাশ করি 'ইবই রন্ধন প্রণালী'। যেন বাংলা ইবই যারা ভবিষ্যতে প্রকাশ করতে চান তাঁরা একটা দিকনির্দেশনা হাতে নিয়ে কাজ এগুতে পারেন। সম্প্রতি গত বছরের ডিসেম্বরে এই বইটি হালনাগাদ করে নতুন করে প্রকাশ করি 'বাংলা eBook' নামে। এই বইটি সবগুলো স্টোর থেকে কয়েক হাজার বার ডাউনলোড করা হয়েছে।
এবার একটা জরুরী তথ্য দিই।
আমার এই লেখার উদ্দেশ্য তবে কী? বইদ্বীপ-কে বাংলা ইবইয়ের পাইওনিয়ার দাবি করা?
না, একদমই তা নয়।
প্রথম যখন স্ম্যাশওয়ার্ডস সাইটটি খুঁজে পাই, পাওয়া মাত্রই আমার মাথায় আসে, এখান থেকে যেভাবে ওয়ার্ড ফাইল আপলোড করে ইংরেজি বই বের করা যায়, একইভাবে বাংলা ইবইও কি বের করা সম্ভব? প্রবল উৎসাহ নিয়ে আমি যখন কাঠের সেনাপতি-র পাণ্ডুলিপি গুছিয়ে নিয়ে অবশেষে ইবই প্রকাশ করলাম, তার কিছুদিন বাদেই ভালমতন খুঁজতে গিয়ে দেখি ঐ সাইটেই 'দুপুর মিত্র' নামে একজন কবি/ লেখক ইতোমধ্যেই সেখানে বাংলা ইবই প্রকাশ করেছেন, সেই বইটির নাম ছিল '৪৪ কবিতা'। তখন খেয়াল করি এই বইটির প্রকাশকাল হচ্ছে- ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
এই বইটি দেখে আমার উৎসাহ শতগুণ বেড়ে যায়। আমি তখন পরের বইগুলোর পরিকল্পনা শুরু করি।
আমি ইতিহাসবিদ নই। প্রথম কে বাংলা ইবই প্রকাশ করেছিলেন এ তথ্যের খোঁজ আমি করিনি। কেউ ঠিকঠাক খুঁজলে এর আগের কোনও ইবই পেলেও পেয়ে যেতে পারেন; আবার না-ও পেতে পারেন।
আমার বক্তব্য এইটুকুই।
- তারেক নূরুল হাসান
১৮ জুলাই ২০২০
Comments